নমনীয়তা (Elasticity) হলো একটি বস্তু বা পদার্থের সেই গুণ, যা তাকে বাহ্যিক বল বা শক্তি প্রয়োগ করার পর তার আকার বা আয়তন পরিবর্তন করতে দেয়, এবং বলটির অপসারণের পর সেই পরিবর্তনটি ফিরে আসতে সক্ষম হয়। সহজ ভাষায়, নমনীয়তা হল একটি বস্তু বা পদার্থের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার ক্ষমতা, যখন তার ওপর বাহ্যিক প্রভাব প্রয়োগ করা হয় এবং পরবর্তীতে সেই প্রভাব অপসারণ করা হয়।
নমনীয় বস্তু যখন একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বাঁকা বা সঙ্কুচিত বা প্রসারিত হয়, তখন তা আবার তার মূল অবস্থায় ফিরে আসতে সক্ষম হয়। যদি বাহ্যিক প্রভাবটি তার নমনীয়তার সীমা ছাড়িয়ে যায়, তবে বস্তুটি স্থায়ীভাবে বিকৃত হয়ে যেতে পারে, যার ফলে তার আসল আকার ফিরে আসতে পারে না।
নমনীয়তার ধরণ:
নমনীয়তা বিভিন্ন ধরণের হতে পারে, যার মধ্যে প্রধানত তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে:
- প্রসারণ (Tensile) নমনীয়তা:
- যখন কোনো পদার্থের দৈর্ঘ্য বাড়ানোর জন্য বাহ্যিক বল প্রয়োগ করা হয়, এটি প্রসারণ নমনীয়তা বলা হয়। যেমন, কোনও দড়ি বা ধাতু টানলে তার দৈর্ঘ্য বাড়ে এবং পরে বলটি অপসারণ করলে তা আবার আগের আকারে ফিরে আসে।
- উদাহরণ: দড়ি, স্ট্রিং, রাবার।
- সংকোচন (Compressive) নমনীয়তা:
- যখন কোনো পদার্থের দৈর্ঘ্য কমানোর জন্য বাহ্যিক বল প্রয়োগ করা হয়, এটি সংকোচন নমনীয়তা বলা হয়। যেমন, যেকোনো পদার্থে চাপ প্রয়োগ করলে তার আকার ছোট হয়ে যেতে পারে এবং চাপ অপসারণের পর এটি আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে।
- উদাহরণ: রাবার, ধাতু।
- বাঁকানো (Shear) নমনীয়তা:
- যখন কোনো পদার্থে বাঁকানোর জন্য বাহ্যিক বল প্রয়োগ করা হয়, তখন এই ধরনের নমনীয়তা হয়। এর মাধ্যমে পদার্থের আকার এবং গঠন পরিবর্তিত হয়, কিন্তু বল অপসারণের পর তা পুনরুদ্ধার হতে পারে।
- উদাহরণ: কাঠ, লোহার পাত।
নমনীয়তার সূত্র:
নমনীয়তা বোঝার জন্য সাধারণত হুকের আইন (Hooke's Law) ব্যবহার করা হয়, যা বল প্রয়োগের পর বস্তুটির প্রতিক্রিয়া বা স্ট্রেন (strain) এর সাথে সম্পর্কিত।
হুকের আইন:
\[
F = k \times x
\]
এখানে,
- \( F \) হলো প্রয়োগকৃত বল (Force),
- \( k \) হলো বস্তুটির স্টিফনেস বা কঠিনতা (Spring constant),
- \( x \) হলো বস্তুটির আকারে পরিবর্তন (যেমন, প্রসারণ বা সংকোচন)।
যখন কোনো বস্তুতে বাহ্যিক বল প্রয়োগ করা হয় এবং এটি তার আকার পরিবর্তন করে, তখন \( x \) পরিবর্তিত হয়, এবং \( F \) অনুযায়ী এটি পুনরুদ্ধার করার জন্য একটি প্রতিক্রিয়া (restoring force) তৈরি হয়।
নমনীয়তা ও তার সম্পর্ক:
নমনীয়তা বিভিন্ন পদার্থের গুণাবলী এবং বৈশিষ্ট্যের সাথে সম্পর্কিত, বিশেষ করে তাদের প্রকৃতি এবং অণু-স্তরের সংযোগের সঙ্গে। নমনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে:
- সামঞ্জস্য (Balance) সম্পর্ক:
- যেকোনো বস্তু বা পদার্থের নমনীয়তা তার তন্তু বা অণু শক্তি এবং তার রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ, দুটি বস্তু একে অপরকে টানলে তাদের নমনীয়তা কাজ করবে এবং সেটি আসল আকারে ফিরে আসবে যদি তারা কোনো স্থায়ী বিকৃতির মধ্যে না পড়ে।
- লিঙ্ক (Link) সম্পর্ক:
- নমনীয়তার লিঙ্ক তার শক্তি এবং গতির সাথে সম্পর্কিত। যেমন, একটি বস্তুর শক্তি প্রয়োগ করলে এটি তার গতির অবস্থান পরিবর্তন করবে, কিন্তু এর নমনীয়তা প্রক্রিয়া তাকে কিছু সময়ের জন্য তার মূল অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে।
নমনীয়তার প্রভাব:
- প্রাকৃতিক উপাদানে নমনীয়তা: উদাহরণস্বরূপ, গাছের শাখা বা পাতা বাহ্যিক শক্তি প্রয়োগের পর তার আকার পরিবর্তন করতে পারে এবং পরে ফের ফিরে আসতে পারে।
- ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইনে নমনীয়তা: বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক যন্ত্রাংশ যেমন, বসন্ত, সাসপেনশন সিস্টেম ইত্যাদির কাজের প্রক্রিয়া নমনীয়তার উপর নির্ভরশীল।
- ধাতু ও প্লাস্টিকের নমনীয়তা: ধাতু ও প্লাস্টিকের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য তাদের নমনীয়তার মাত্রার উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। এটি প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তৈরি করা সম্ভব হয়।
সারাংশ:
নমনীয়তা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিজ্ঞান গুণ, যা বস্তুর আকার বা আয়তন পরিবর্তন করার পর আবার প্রাকৃতিক অবস্থায় ফিরে আসার ক্ষমতা বোঝায়। এটি প্রকৌশল, যান্ত্রিক ডিজাইন এবং দৈনন্দিন জীবনের অনেক যন্ত্রাংশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নমনীয়তা বুঝতে হুকের আইন এবং প্রকারভেদগুলোর প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ।